স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত!
সময় পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে সবকিছুই যেন পরিবর্তন হচ্ছে। আগেকার দিনের সমাজ সংসারের যেমন অবস্থা ছিল এখনকার সময়ে সেটা আর দেখা যায় না। বর্তমানে বিচ্ছেদের ঘটনা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে! বিচ্ছেদের মতো ঘটনা থামাতে চাইলে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত!
কেন স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত?
আগেকার দিনে দেখা, যেত আমাদের দাদা দাদিরা তাদের স্বামীর নাম মুখে নিত না কারণ তারা ভাবত এতে করে স্বামীর প্রতি সম্মান এর একটু অমর্যাদা হচ্ছে। যদিও এটি একটি কুসংস্কার কিন্তু একটু ভাবুন তো চিন্তা ধারা ভাবনাটা কিন্তু সম্মানের। তো, আগেকার দিনে স্বামীরা তাদের স্ত্রীকে এবং স্ত্রী তার স্বামীকে অনেক বেশি সম্মান এবং আদর যত্ন করত।
কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে অনেক বয়স্ক মহিলাদের কে দেখা যায় সংসার জীবনের একেবারে শেষের দিকে এসে স্বামীর সাথে শুধু শুধু চিৎকার এবং চেঁচামেচি করে যায়। স্বামীকে তার কাছে অসহ্য মতো লাগে। আর এক সময় যে স্বামীর কথা কত বছর আগেও মধুর মতো লাগত, আজ সেই স্বামীর কথাই তাদের কাছে বিষের মতো মনে হয়। যদি তাদের স্বামী ভালো কিছু বলে, তাদের কাছে অনেক বাজে কিছু মনে হয়। আর এর পেছনে যে অনেক অতীত থাকে তা অনেকেই বুঝতে চায় না বা বুঝতে পারে না। তবে একটু ভাবুন তো, জীবনের শেষদিকে এসে একজন স্বামী তার স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যৌবন লগ্নে কি তিনি এতটুকু নির্ভরশীল ছিলেন?
আরও পড়ুন: ডিপ্রেশন কী এবং ডিপ্রেশন থেকে বের হবার উপায়?
তবে আমাদের সমাজে একটা বিষয় কিন্তু দেখা যায় সেটা হলো, বিয়ে ভালোবেসেই হোক অথবা বাবা মায়ের পছন্দে হোক না কেন, বিয়ের কিছুদিন যাওয়ার পর পরই স্বামী তার আসল রূপটি দেখাতে শুরু করে। শুধু শুধু স্ত্রীকে বকাঝকা করা কিংবা মারধর করা কিংবা অন্যদের সামনে তার স্ত্রীকে ছোটো করা। স্ত্রীর হাজারটা গুণ থাকা সত্ত্বেও তা না দেখে আঙুল দিয়ে তার দোষগুলো দেখানো। তখন তারা স্ত্রীকে মনে করে কেবল বিছানার সঙ্গী এবং বাচ্চা জন্মদানকারী একটি মেশিন। নিজেদের উপার্জনের অর্থ কেবল নিজের সুখ এবং সন্তানদের আহ্লাদে খরচ করে। অথচ স্ত্রীর জন্য সামান্য খরচ করাও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না অনেক সময়। আবার অনেক সময় স্ত্রীর সাথে দুটো কথা বলারও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। শুধু তারা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখে বিভিন্ন কাজকর্মে! কখনো একটু মন ভালো করার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে চায় না, ভালো কোনো খাবার খাওয়াতে চায় না। স্ত্রীর কোনো মতামতকে মূল্যহীন ভাবে!
আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা পুরুষের এমন কিছু আচরণগত সমস্যা রয়েছে। কোনো স্ত্রী যদি কোনো কাজ ঠিক বা সুন্দর মতো করতে না পারে তো তখন বউ হয়ে যায় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে অকর্মা মানুষ। মনে হয় যেন স্ত্রী হয়ে জন্ম নেওয়ায়; পৃথিবীর সবকিছু তার জানতে হবে, করতে হবে বা পারতে হবে! মনে করে যেন বউ মানেই কোনো এক ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী। অথচ সে কাজটি যদি কোনো এক পুরুষ না পারে তাহলে সেক্ষেত্রে কোনো কিছু যায় আসে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, স্বামীর বাবা মা ভাই বোনদের জন্য দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীকে অনেকেই তার পরিবার সহ অত্যাচার নির্যাতন করেছেন! আর কোনো এক সময় সেটা তার স্বামীর ভালোবাসার বিপরীত রূপ হিসেবে কাজ করে।
তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা নারীর প্রতি যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া! এতে করে কিন্তু আমাদেরই লাভ। কিন্তু এখন বলতে পারেন, এখানে লাভের কথা বললাম কেন? একবার ভাবুন, একটু চিন্তা করুন, আপনার পরিবারেরও কিন্তু আপনার বোন আছে, ফুপু, খালা আছে, তারাও তো নারী। কোনো একটা পর্যায়ে তারা যদি এসব অন্যায় অত্যাচারের স্বীকার হয়ে থাকেন; তাহলে আপনার কেমন লাগবে? উত্তর টা নিজেই নিজেকে দেবেন। তাই আমাদের উচিত নারী আর পুরুষ যাই হোক না কেন, কোনো ভেদাভেদ না রেখে প্রত্যেকের প্রতি যথেষ্ট সম্মানবোধ রেখে সংসার জীবনে এগিয়ে যাওয়া। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া!