টিপস এন্ড ট্রিকসস্বাস্থ্যস্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল

আগুনে পোড়া,র রকমভেদ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা!

এইতো কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন অনেক মানুষ। এর আগে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঝালকাঠি লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড, নারায়ণগঞ্জের সেজান ফুড ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ড, বিভিন্ন বড়ো বড়ো অগ্নিকাণ্ডে অনেক মানুষ হতাহত হয়। আর প্রতিদিনই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কেবল ফ্যাক্টরি, রাস্তা-ঘাটেই নয়, ঘর বাড়িতেও অগ্নিকাণ্ড হয়ে মানুষ হতাহত হয়। বিশেষ করে শীতকালে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে। আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের উদ্দেশ্যে অগ্নিকাণ্ডের সচেতনতা বৃদ্ধি। কারণ অনেকেই জানেন না, অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত। যদি প্রাথমিক কিছু বিষয় জানা থাকে, তবে অগ্নিদগ্ধ হলেও অনেক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব। চলুন জেনে নেই—আগুনে পোড়ার রকমভেদ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে।

•আগুনে পোড়ার রকমভেদ—আগুনে পোড়ার অনেকগুলো ধরন আছে। তার ওপর ভিত্তি করে সাধারণত চিকিৎসাও প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন—
১|ফাস্ট ডিগ্রী বার্ন— ফাস্ট ডিগ্রী বার্নে ত্বকে উপর দিকের প্রথম স্তর বা এপিডার্মিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও ব্যথাও থাকতে পারে। এই ফার্স্ট ডিগ্রী বার্নকে সুপারফিসিয়াল বার্নও বলা হয়ে থাকে। এই বার্ন সাধারণত অল্প আগুনের আঁচে বা হিটের জন্য হয় এবং এক্ষেত্রে ক্ষত স্থান হালকা লালিচে হয়। এছাড়াও ক্ষত স্থান শুকনো থাকে এবং কোনো ব্লিস্টার বা ফোসকা পড়ে না।

২|সেকেন্ড ডিগ্রী বার্ন—সেকেন্ড ডিগ্রী বার্নে ত্বকের উপর দিক বা এপিডার্মিস পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরবর্তী স্তর ভা ডার্মিস আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বার্নে চামড়া একেবারে পুড়ে বা ঝলসে গিয়ে ধূসর বা লালচে রঙ ধারন করে এবং ফোসকা পড়ে।
৩|থার্ড ডিগ্রী বার্ন—থার্ড ডিগ্রী বার্নকে ডিপ বার্নও বলা হয়ে থাকে। এই বার্নে চামড়া পুড়ে কালো হয়ে যায় এবং তা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। থার্ড ডিগ্রী বার্নে ত্বকের উপর দিকের দুই স্তরই অর্থাৎ এপিডার্মিস ও ডার্মিস পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এছাড়াও চামড়ার নিচের মাংসপেশি, রক্তনালী, স্নায়ু, ইত্যাদিও আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায়, চামড়া শক্ত হয়ে যায় পুড়ে, স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভব হয় না।
৪|স্ক্যাল্ড বার্ন—বিভিন্ন ধরনের বার্নের মধ্যে অন্যতম আরেকটি হলো স্ক্যাল্ড বার্ন। যদি শরীরে গরম কোনো তরল জাতীয় পদার্থ পড়ে পুড়ে যায়, তাকে স্ক্যান্ড বার্ন বলে। বিশেষ করে বাচ্চা ও মহিলারা তরল পদার্থ যেমন-গরম চা, ডাল, ভাতের মাড়, তেল, ইত্যাদিতে বেশি পুড়ে থাকে। আর এই ধরনের বার্ন সাধারণত ফার্স্ট ডিগ্রী হয়ে থাকে।

৫|ফ্লেইম বার্ন—ফ্লেইম বার্ন সাধারণত শীতকালে বেশি দেখা যায়। গ্রামাঞ্চল বা শীত প্রধান অঞ্চলের লোকেরা শীত দূর করতে আগুন পোহায়৷ তো আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতা বশত নিজের শরীরে বা শরীরের কাপড়ে আগুন লাগিয়ে ফেলে। এর ফলে অনেক সময় বড়ো বিপর্যয় নেমে আসে। এই ফ্লেইম বার্ন ফার্স্ট ডিগ্রী, সেকেন্ড ডিগ্রী, থার্ড ডিগ্রী যে কোনো রকমের হতে পারে।
৬|কেমিক্যাল বার্ন—কোনো কেমিক্যাল বা দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পুড়ে গেলে, তাকে কেমিক্যাল বার্ন বলে। বিভিন্ন ধরনের দাহ্য কেমিক্যাল রয়েছে, যেমন- এসিড, অ্যামোনিয়া জাতীয় পদার্থ, ব্লিচ, ইত্যাদি। এসব দাহ্য পদার্থ ত্বক, চোখ, মুখ বা কোনো অঙ্গের সংস্পর্শে আসলে মারাত্মক বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে। এমনকি আক্রান্ত অঙ্গ একবারে অচল হয়েও যেতে পারে।
৭|ইলেকট্রিক বার্ন— ইলেকট্রনিক বা কারেন্টে শক লেগে পুড়ে গেলে তাকে ইলেকট্রনিক বার্ন বলে। এক্ষেত্রে হাই ভোল্টেজের কারেন্ট শক খেলে অনেক সময় থার্ড ডিগ্রী বার্ন বা রোগীর তৎক্ষনাৎ মৃত্যুও ঘটতে পারে।

•আগুনে পুড়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা—আগুনে পুড়ে গেলে কোনো কিছু না ভেবে শুরুতেই প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দিতে হবে। যেমন-
*প্রথমেই অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তির শরীর হতে পোড়া কাপড় খুব সাবধানে খুলে বা সরিয়ে ফেলতে হবে। সাবধানতা অবলম্বন না করলে রোগীর পোড়া শরীর হতে কাপড়ের সঙ্গে চামড়া ওঠে যেতে পারে। এছাড়াও পোড়া ক্ষত অংশে কাপড়ের ময়লা বা ছাই লেগে তাতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

*অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তির প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে পানি এবং কেবলই পানি। রোগীর পোড়া শরীরে যত বেশি পারেন পানি ঢালতে হবে। এর ফলে আগুনে পোড়া ত্বক ঠাণ্ডা হবে, কিছুটা হলেও জ্বালা পোড়া ভাব কমবে।
*তবে অনেকেই পোড়া অংশে বরফ বা বরফ শীতল পানি ব্যবহার করে থাকেন। এটা একদমই করা যাবে না। এতে করে পোড়া ক্ষতের গভীরতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এইজন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ৩০ মিনিটের মতো পোড়া ক্ষতস্থান ধুতে হবে।
*আগুনে পোড়া জায়গায় কেবলমাত্র পানি ঢেলেই পোড়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। কেবল পানি ঢেলেই আগুনে পোড়ার মাত্রা ২০ শতাংশ হতে ১৫/১০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।
*পানি ঢালার পর ক্ষত স্থান কিছুটা স্বাভাবিক হলে এরপর লো ডোজ হাইড্রকর্টিসন ক্রিম বা বার্ন ক্রিম দিয়ে ক্ষত স্থানে প্রলেপ দেওয়া যেতে পারে।
*তবে হাতের কাছে যদি তাৎক্ষণিক এসব না পাওয়া যায় তাহলে বাসায় থাকা ময়েশ্চারাইজিং লোশন বা অ্যালোভেরা লোশন দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়াও শুধুমাত্র ভ্যাসলিন বাসায় থাকলে তাও দেওয়া যেতে পারে। ভ্যাসলিনও ত্বককে দ্রুত ঠান্ডা করে।
*তবে পেট্রোল বা তেল জাতীয় পদার্থে আগুন ধরলে পানি ব্যবহার করা যাবে না। তাতে আগুন আরও বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে শরীরের আগুন নেভাতে বালু বা মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি দিতে হবে এবং আগুন নিবে গেলে শরীরে পানি ব্যবহার করা যাবে।
*ভয়াবহ আগুনে পোড়া রোগীর প্রথম ছয় ঘন্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়া গেলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। শরীরে পুড়ে যাওয়ার মাত্রা ৩০ শতাংশের বেশী হলে জরুরী চিকিৎসা দিতে হয়। ৪০ শতাংশের বেশী পুড়ে গেলে সে রোগীকে সংকটাপন্ন ধরা হয়। তবে রোগীর সেরে ওঠা বয়সের উপরেও অনেকটা নির্ভর করে। বয়স্কদের পোড়া কম হলেও মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি থাকে।

•আগুন থেকে দূরে থাকতে মানতে হবে যেসব বাড়তি সতর্কতা—
১) বাংলাদেশের গ্রামঞ্চল বা শীত প্রধান অঞ্চলের মানুষ শীত দূর করতে আগুন পোহায় সাধারত। তবে আগুন পোহাতে গিয়ে তাপ নেওয়ার সময় কাপড়ে আগুন লেগে শরীরের নিম্বাংশ পুড়ে যায়, বিশেষ করে তলপেট, উরু, যৌনাঙ্গ, ইত্যাদি। তাই আগুন পোহাতে গেলে শরীরের কাপড় সাবধানে রাখুন। চেষ্টা করুন কিছুটা দূরে বসেই আগুনের তাপ নেওয়ার।
২) অনেকেই শীতকালে ঘর বা রুম গরম রাখতে বিভিন্ন ধরনের হিটার ব্যবহার করেন। এসব হিটার জানালা বা বিছানা, বা কোনো শুকনো কাপড় বা বস্তুর কাছে রাখলে তা দিয়ে আগুন লেগে যেতে পারে। এইজন্য এমন স্থানে হিটার রাখুন, যাতে আগুন না লাগে।
৩) ঘরের যেখানে সেখান গরম পানি রাখা ও গরম কিছু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বিশেষ করে ঘরে যদি হামাগুড়ি দেয় এমন শিশু বা কোনো শিশু থাকলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।

৪) অনেকেই আছেন ঘর গরম করতে বা কাপড় শুকানোর জন্য চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। এছাড়াও কাঠের চুলার ওপর কাঠ রাখেন। এমন করা যাবে না। এতে মারাত্মক ঝুঁকি তো বটেই। সেই সাথে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখলে গ্যাসের অপচয়। আর গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গিয়ে বা চুলার ওপর থাকা কাপড় বা কাঠে আগুন লেগে পুরো ঘরে আগুন লেগে যেতে পারে।

৫) মশার থেকে বাঁচার জন্য মশার কয়েল সবাই ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু, অসাবধানতার কারণে এই মশার কয়েল থেকেও মারাত্মক আগুন লেগে যেতে পারে। বিছানার উপর বা কাপড় চোপড়ের কাছাকাছি মশার কয়েল রাখা যাবে না। এমন অনেক উদাহরণ আছে, বিছানার তোশক পুড়ে পুরো ঘরে আগুন লেগেছে। তাই কয়েল ব্যবহারে সাবধান হোন।
৬)যদি বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে বা শর্ট সার্কিটে আগুন লাগে, তবে প্রথমেই সেখানের মেইচ সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে।
৭) যদি বাসায় কোনো দাহ্য বস্তু থাকে, তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আগুন হতে নিরাপদ দূরত্বে থাকে।
৮) অনেকে ছোটো বাচ্চাদের কোলো নিয়ে গরম চা, কফি, গরম স্যুপ বা গরম খাবার খেয়ে থাকেন এবং রান্নার কাজও সারেন। এটা একদমই উচিত নয়। বাচ্চারা চঞ্চল হয়। হয়তো সে নাড়াচাড়া করে গরম খাবারে হাত দিয়ে হাত পুঁড়ে ফেলতে পারে, নতুবা তার চঞ্চলতার কারণে গায়ে সেই খাবার পড়তে পারে। তাই গরম খাবার খাওয়া বা রান্নার সময় বাচ্চাকে দূরে রাখতে হবে।

৯)অনেক বয়স্ক ডায়াবেটিক রোগীদের পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির কারণে হাত পায়ের সেনসেশন কমে যায়। অনেক সময় হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে গরম সেঁক নেয়ার সময় তারা তাপমাত্রার তারতম্য টের পান না। এক জায়গায় অনেকক্ষণ গরম হট ওয়াটার ব্যাগ ধরে রাখার কারণে ড্রাই হিট বার্ন বা ফার্স্ট ডিগ্রী বার্ন হতে পারে। এছাড়াও অনেকে পিরিয়ড বা শরীর ব্যথায় হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করে থাকেন। চেষ্টা করবেন সাবধানে গরম পানি ব্যাগে ভরতে, ব্যাগের মুখ ভালো করে আটকাতে। আর ব্যাগটি ভালো করে দেখে নেবেন যে কোনো অংশে ফুটো আছে কিনা! না হয় এ থেকেও বড়ো ধরনের বিপদ হতে পারে।
১০)পানি গরম করার ইলেকট্রিক কয়েল বা রড ব্যবহার করে অনেকে পানি গরম করে থাকেন। পানি গরম করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই পানির তাপমাত্রা চেক করার সময় কারেন্টের সুইচ অফ না থাকলে, তা থেকে শক লাগতে পারে। তাই সব সময় গরম পানি করতে এই বিষয় মাথায় রাখবেন।
১১)বাসায় এসি থাকলে, কিছুদিন পর পর এসি চেক করে নেবেন। সব ঠিক আছে কিনা। নয়তো এসি হতেও মারাত্মক বিপদ ঘটতে পারে।
১২) কোনো কারখানা বা অফিসে কাজ করলে, আগে থেকেই ওইখান থেকে বের হবার রাস্তা চিনে রাখুন। যাতে বিপদ হলে সেখান হতে দ্রুত বের হতে পারেন। এছাড়াও কোনো দাহ্য পদার্থ আছে এমন জায়গায় কাজ করলে সিগারেট খাওয়া, দিয়াশলাই জ্বালানো হতে বিরত থাকুন।

১৩) মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোনো কারখানা বা দাহ্য কেমিক্যালের আস্তানা গড়া থেকে বিরত থাকুন এবং এই ধরনের কাউকে বাসা ভাড়া দিতেও সাবধান থাকুন।
•আগুন থেকে দূরে থাকতে যে কাজগুলো একেবারেই করা যাবে না— আগুন লাগলেই কিছু কিছু মানুষ আতংকিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। এতে করে আরও বিপদ হতে পারে। বিশেষ করে শরীরে আগুন লাগলে যদি আগুন নিয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি করা হয়, তাহলে আগুন আরও বেড়ে যেতে পারে। অথবা কোনো স্থানে ঘষা বা ডলা লেগে চামড়া ওঠে যেতে পারে। পোড়া ক্ষত স্থানে টুথপেষ্ট, লবণ, ডিমের সাদা অংশ, পেয়াজের রস, বরফ, ইত্যাদি দেওয়া যাবে না। এগুলো পোড়া ক্ষত স্থানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ব্যবহার করলে পোড়া ক্ষত স্থান হতে তাপ বের হতে পারে না এবং সেকেন্ড কিংবা থার্ড বার্ন হয়ে যায়। ত্বকের পোড়া স্থানে ফোসকা পড়লে বা পোড়া চামড়া কখনোই গলানো বা তুলা উচিত নয়।

আরো পড়ুন: যে আমলগুলো করলে সহজ হবে জান্নাতে যাওয়া

কেননা, ফোসকার ভেতর যা পানি থাকে তা প্রোটিন জাতীয় পদার্থ, এগুলো শরীর নিজে নিজেই শোষণ করে নেবে। অনেকেই আগুন নেভানোর জন্য শুকনো কম্বল ব্যবহার করে থাকে। এমন করা যাবে না। এতে করে আগুনের তাপ শুকনো কম্বল দেহের মধ্যে আটকে রাখে, এতে ত্বকের দগ্ধতা বৃদ্ধি পায়। অথবা, কম্বলেই আগুন লেগে যায়। আগুন কোথাও কখন অসাবধানতার ফলে লাগে তা তো আসলে হিসাব নেই। তো কোনো উচু দালান বা কোথাও আগুন লাগলে অনেকেই আগুন হতে বাঁচতে নিচে লাফ দিয়ে থাকে। এতে করে অনেকের প্রাণহানিও ঘটে। তাই আতংকিত হয়ে উচু হতে লাফ না দিয়ে ধৈর্য ধরুন। ফায়ার সার্ভিস কর্মিরা যদি না থাকে, সেক্ষেত্রে সাবধানে নিচে নামার চেষ্টা করুন। আর যদি নিচের পথ বন্ধ থাকে তবে ছাদে ওঠে যান। আর এই বন্ধ থাকলে দঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে নামুন। এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ আগেই নিতে পারেন। অনেকেই থাকে অগ্নিকাণ্ড ঘটা স্থানে দাঁড়িয়ে আগুন পর্যবেক্ষণ করেন, আবার ভিডিও করেন। এমন করা যাবে না। যদি আগুন আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তবে খুব দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করুন। আশেপাশে বাচ্চা, বয়স্ক থাকলে তাদের ও সেই স্থান হতে বের হতে সাহায্য করুন।

•কোন ধরনের আগুন কীভাবে নেভাবেনঃ
*যে কোনো ধরনের শুকনো বস্তু যেমন কাপড়, কাগজ, বাঁশ ,কাঠ বা দালান কোঠায় আগুন লাগলে আতংকিত না হয়ে পানি ব্যবহার করুন। এটিই আগুন নেভানোর সবচেয়ে ভালো উপায়। তবে আগুন নেভাবোর আগে শে পাশে কারেন্টের লাইন থাকলে দ্রুত মেইন লাইন বন্ধ করে নিন।
*যদি পেট্রোল, ডিজেল বা তেল জাতীয় পদার্থে আগুন লেগে যায়, তবে পানি ব্যবহার করা হতে বিরত থাকুন। কারণ পানির জন্য এসব পদার্থ ছড়িয়ে যায় এবং আগুন আরও বৃদ্ধি পায়। তাই আগুন লাগার স্থান ছোট হলে বালি, ভেজা ছালার বস্তা, ভেজা কাঁথা বা ভেজা কম্বলের মতো ভারী বস্তু দিয়ে ঢেকে দিন। এতে আগুন নিভে যাবে।
*যদি জ্বালানি তেলের আগুন লাগে। তবে সেই আগুন নেভাতে ফেনা জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা উত্তম। গ্যাসের আগুন নেভাতে কার্বন ডাই অক্সাইড সবচেয়ে ভালো কাজ করে। উভয় ক্ষেত্রেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করাই উত্তম।
*যে কোনো ধরনের গ্যাস থেকে আগুন লাগলে গ্যাসের মেইন লাইন বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর পানির জোর ঝাপটা দিয়ে আগুন নেভাতে হবে। যদি গ্যাস লিক করছে বোঝা যায় তাহলে কোনোভাবেই সেই স্থানের কাছে দিয়াশলাই, সিগারেট, জ্বলন্ত মোমবাতি এ ধরনের কিছু নেয়া যাবে না।

*ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগলে কোনোভাবেই তাতে পানি দেয়া যাবে না। পানি বিদ্যুৎ সুপরিবাহী বলে যে কেউ সহজেই বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমেই কারেন্ট এর মেইন সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর নিরাপদ দূরত্ব থেকে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সব থেকে ভালো হয় ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করতে পারলে। বাংলাদেশের কোনো স্থানে আগুন কাগলে দ্রুত ফায়ারসার্ভিস কর্মীকে ফোন করুন, সেই সাথে উপরের নির্দেশনা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করুন। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসার আগে সবাই মিলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহন করুন। অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসা তো দ্রুত অবশ্যই করাতে হবে। তবে সব সময় চেষ্টা করুন নিজে সর্তক থাকতে এবং নিজের চারপাশের মানুষকে সর্তক রাখতে। কেননা, একমাত্র সাবধানতাই আগুন লাগা হতে বাঁচাতে পারে। এছাড়াও আপনার এলাকায় যদি দাহ্য পদার্থের কোনো কারখানা থেকে থাকে, তা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান। কেননা, ঘনবসতিপূণর্ এলাকায় দাহ্য পদার্থের কারখানা না গড়ার বিষয়ে আইন আছে এবং নিজেও অবৈধ রাসায়নিক কারখানা গড়া হতে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, একজন মানুষের জীবন অর্থের চেয়ে অনেক বেশি দামী। অর্থ চলে গেলে তা একসময় হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু মানুষের প্রাণহানি ঘটলে তাকে আর পাওয়া যায়। আপনার অসাবধানতার কারণে কারও ক্ষতি হলে, তা আপনার জন্য একদমই শোভনীয় নয়। তাই নিজে সর্তক থাকুন এবং অন্যকেও সর্তক করুন। যাই হোক, আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তীতে দেখা হবে নতুন কোনো বিষয় নিয়ে। আর হ্যাঁ, এই আর্টিকেলটি নিজের পরিচিত শেয়ার করে সর্তক করতে পারেন এবং এই ধরনের আরও আর্টিকেল পেতে অনুলিপির সাথেই থাকুন।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।