ফিচারলাইফস্টাইলস্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল

গরমে ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

আদিকাল হতে ডাবের পানি জনপ্রিয় একটি পানীয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে এবং অনেকের পছন্দের প্রথম তালিকায় রয়েছে এই ডাবের পানি। ডাব পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। তবে, কোস্টারিকা, ডমিকান রিপাবলিক, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ব্রাজিল, ফিলিপিনস, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, মেক্সিকো, ভারত ও বাংলাদেশ বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশের ডাবের মূল যোগান আসে দক্ষিণাঞ্চল ও সেন্টমার্টিন হতে। তবে, এই ডাব গাছ বা নারিকেল গাছ বাংলাদেশের সর্বত্রই কম বেশি জন্মে। তো, চলুন আজকে জেনে নিই, ডাবের পুষ্টিগুণ, গরমে সুস্থ রাখতে ডাবের পানির ভূমিকা এবং ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

গরমে ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

ডাব বা নারিকেল আরোকেসিয়াই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং এই পরিবারের প্রায় ৪০০০ প্রজাতির গাছ বিদ্যমান রয়েছে। ডাবের পানির স্বাদ নির্ভর করে তার পরিবেশের ওপর। অর্থাৎ, মাটির ওপর। যেমন- সমুদ্র তীরবর্তী ডাবের পানি নোনতা স্বাদ হয় এবং মিঠা পানির উৎসের কাছাকাছি অঞ্চলের ডাবের পানির স্বাদ তুলনামূলক মিষ্টি হয়। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ডাব উৎপন্ন হয় ইন্দোশিয়াতে। এছাড়াও, ফিলিপিনস ও ভারতবর্ষেও জন্মে। বিশেষ করে ভারতের কেরেলা, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে ডাব অধিক জন্মে।

ডাবের ৯৫% হলো পানি এবং বাকি ৫% এ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর উপাদান। যেমন: ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ইত্যাদি। এছাড়াও প্রোটিন, চিনি ও শ্বেতসার রয়েছে। ডাবের পানিতে ক্যালরি কম থাকায়, এটি পান করলে শরীরে চর্বি বৃদ্ধি ঘটে না।

#আরও পড়ুন: গোরুর মাংসের তিনটি সহজ ও মজাদার রেসিপি!

ডাবের পানির যত উপকারিতা:

ডাবের পানি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়্যাল সমৃদ্ধ হওয়ায় তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই ডাবের পানি দেহ ও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এছাড়াও ডাবের পানির রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে।

দেহের আর্দ্রতা বৃদ্ধিতে— শারিরীক পরিশ্রমের ফলে আমাদের দেহ হতে আর্দ্রতা কমে যায়। এই আর্দ্রতা ঠিক রাখতে ডাবের পানির জুড়ি নেই। কেননা, ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে খনিজ উপাদান।

ত্বকের ইনফেকশন কমায়— ডাবের পানি ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য সমস্যা কমাতেও ব্যবহৃত হয়। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। তাছাড়াও ডাবের পানি ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে— ডাবের পানি ব্ল্যাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণেও বেশ কার্যকরী। কেননা, ডাবের পানি উপস্থিত রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন উপাদান। যেসব উপাদান ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

হাড়কে মজবুত রাখে— আমাদের হাঁড় মজবুত রাখতে প্রয়োজন হয় ক্যালসিয়ামের। আর ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম। যা আমাদের হাঁড়কে মজবুত রাখে। এছাড়াও হাঁড়কে ভালো রাখা ম্যাগনেসিয়ামও উপস্থিত রয়েছে ডাবের পানিতে।

খাবার স্যালাইনের বিকল্প— ডাবের পানিকে খাবার স্যালাইনের বিকল্পও বলা হয়। কেননা, ডাবের পানিতে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা ও মিনারেল। যা শরীরকে শীতল ও আর্দ্র রাখে। আর ডাবের পানির এই বিশেষ গুনের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়টাতে যোদ্ধাদের খাবার স্যালাইনের বিকল্প হিসাবে ডাবের পানি দেওয়া হয়। এই ডাবের পানির ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ফাইবার কর্মশক্তি বাড়াতেও সহায়তা করে।

ত্বকের যত্নে— যাদের ব্রণ বা একনের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ডাবের পানি হলো ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এক্ষেত্রে ডাবের পানি তুলোয় ভিজিয়ে ব্রণ বা একনের ওপর লাগিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। সাধারণত শুষ্ক বা যে কোনো ত্বকেই রূপচর্চায় ডাবের পানি ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে ত্বক আর্দ্র হয় এবং তরতাজা দেখায়। বয়সের ছাপ কমে।

ডিহাইড্রেশনের সমস্যা কমায়— বর্তমানে সারা দেশে প্রচণ্ড গরম। যার দরুণ অনেক সময় গরমে মাথা ঘুরায়, বমি হয়। আবার ঘাম হয় প্রচুর। ফলে শরীর প্রচণ্ড দুর্বল লাগে। এমন হলে সাথে সাথে ডাবের পানি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। ডাবের পানি পানিশূন্যতা কমায় এবং ডাবে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তি যোগায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে— ডাবের পানি ক্ষুধা কমায়। কারণ এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। এর ফলে কম খাওয়া হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও ডাবের পানিতে চর্বি না থাকায়, এটি শরীরের অতিরিক্ত চিনি শোষণ করায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

শরীরকে বিষমুক্ত রাখে— ডাবের পানি আমাদের শরীর হতে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ফলে গরমের সময়ও শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে— ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। এছাড়াও ডাবের পানিতে থাকা ডাই-ইউরেটিক উপাদান আমাদের ইউরিনারি ট্যাক ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাক্টিরিয়া নষ্ট করে। সেই সাথে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

চুলের যত্নে ডাবের পানি— ডাবের পানি চুলের জন্য খুবই উপকারী। ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের অকালে পক্কতা রোধ করে। গবেষণায় জানা যায়, ডাবের পানি ব্যবহারে চুলের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এছাড়াও ডাবের পানি চুলের খুসকি দূর করে।

দাঁত ক্ষয় রোধ করে— দাঁতের ক্ষয় বা ক্যারিস হয় মূলত এস.মিউটানস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে। তো ডাবের পানির এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ধর্ম দাঁতের ক্ষয় বা ক্যারিস রোধ করে।

বৃক্কে পাথর জমা রোধ করে— ডাবের পানি আমাদের শরীর হতে টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। ফলে বৃক্কে তা জমতে পারে না। এর ফলে পাথর সৃষ্ট হয় না।

#আরও পড়ুন: ডিটক্স ড্রিংকস: গরমে আপনাকে হাইড্রেটেড ও ফিট রাখবে!

ডাবের পানির অপকারিতা:

ডাবের পানি চর্বিহীন হলেও এর স্বাদ কিন্তু অতুলনীয়। তাই অনেকের পছন্দের পানীয় হিসাবে এর অবস্থান ওপরে থাকে। ডাবের পানির অনেক উপকারিতা থাকলেও অতিরিক্ত ডাবের পানি পান বা ব্যবহার ডেকে আনতে পারে বিপদ। তো চলুন জেনে নিই, ডাবের পানির অপকারিতা সম্পর্কে।

হাইপারক্যালেমিয়ার সম্ভাবনা— উচ্চ মাত্রার পটাসিয়াম সেবনে তা হাইপারক্যালেমিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। আমরা জানি, ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম বিদ্যমান। তাই অতিরিক্ত ডাবের পানি সেবনে তা হাইপারক্যালেমিয়া ঘটাতে পারে।

রক্তচাপ হ্রাস করে— ডাবের পানি উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে, তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ তাদের জন্য ডাবের পানি বেশ উপকারি। তবে যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক বা তারও কম, তাদের জন্য ডাবের পানি বিষের মতো। তারা অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করলে তা মৃত্যু অবধি ডেকে আনে।

কিডনি রোগ বাড়ায়— যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে। তাদের জন্য ডাবের পানি খুবই ক্ষতিকর।

সিজন্যাল সমস্যা বাড়ায়— আবহাওয়া পরিবর্তনে যদি কোনো অ্যালার্জি, সর্দি বা কাশি হয়। তখন ডাবের পানি পান করলে তা সিজন্যাল সমস্যা আরও বাড়ায়।

হৃৎপিণ্ডর জন্য ক্ষতিকর— ডাবের পানিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ। যা অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে হৃৎপিণ্ডকে অকোজো করে দিতে পারে।

ডায়রিয়া সমস্যা বাড়ায়— ডাবের পানিকে খাবার স্যালাইনের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করলেও। অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করার ফলে ডায়রিয়া বেড়ে যেতে পারে।

ওজন কমায়— ডাবের পানি যারা মোটা তাদের জন্য উপকারি বটে। কিন্তু তুলনামূলক চিকন মানুষের ডাবের পানি গ্রহণ না করাই ভালো।

সর্বশেষ, ডাবের পানি নিয়ম মেনে খান। প্রতিদিন এক গ্লাস ডাবের পানি খেতে পারেন। তবে ডাবের পানির সাথে চিঁড়া, চিনি বা কিছু মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়। কেন না, এতে উপকারের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণই বেশি। ডাবের পানি খান একদম ফ্রেশ। বাসি ডাবের পানি বা ফ্রিজে রাখা ডাবের পানি পান না করাই উত্তম। এছাড়াও ছোটো শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডাবের পানি খাওয়ানো হতে বিরত থাকুন। আর ঠান্ডাজনিত কোনো সমস্যা থাকলেও ডাবের পানি এড়িয়ে চলুন।

যাই হোক, আজকের মতো এখানেই। এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরও আর্টিকেল পেতে অনুলিপির সাথেই থাকুন।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।